গত বেশ কয়েকদিন ধরেই মনে হচ্ছিল কোথায় যাওয়া দরকার! কিন্তু যাওয়ার মত সঙ্গী না পাওয়ায় যেতে পারছিলাম না! আমি ছাড়া জগতের সবাই ব্যস্ত! অনেককে বললাম! সর্বশেষে বললাম আরাফাত ভাইকে! তিনি রাজি হলেন! সন্ধ্যায় সিন্ধান্ত নিলাম বরিশাল যাব! জাহাজে বসে নদী-চাঁদ উপভোগ করবো! পরদিন সন্ধ্যায় যাত্রা করার কথা! কিন্তু সকালে মনে হল আজকে তো বৃহঃস্পতিবার; বরিশালের জাহাজে কেবিন পাওয়া মুশকিল! তাই ভাবলাম তাহলে কক্সবাজার যাই! কেন আরাফাত ভাইকে বললাম দুপুরের পর চলে আসতে! এরপর দেখা যাবে কি করার! তিনি আসতে বেশ দেরিই করলেন! বিকালের দিকে আমরা বের হলাম! সিন্ধান্ত নিলাম যেহেতু কক্সবাজার ও বরিশালে আগেই আমরা গেছি এবং যেহেতু কক্সবাজারে প্রচুর গরম হবে তাই সিলেট যাওয়া যেতে পারে! দুজনেই অনেক আগে গেছি সেখানে! কিন্তু যন্ত্রণা শুরু হল যখন মালিবাগ এসে দেখি সোহাগে খালি সিট নাই! গ্রীন লাইনে ফোন করেও একই অবস্থা! বৃহঃস্পতিবার বলে কথা! তারপর আর কি করা! সায়দাবাদ এসে শ্যামলী বাসের টিকিট করলাম! ৬.৩০ এর বাস আসল ৭টায়! তাও ভাল উঠে বসলাম!
কিন্তু একি! একটু পর পর দেখি গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়! ড্রাইভার দেখি হেলপার কে গালিগালাজ করছে! গাড়িতে সমস্যা! কি আর করা! চিটাগাং রোড এসে গাড়ি ঠিক করাতে দেয়া হল! প্রায় ৪৫ মিনিট শেষ! এরপর মোটামুটি ঝামেলা বিহীন ভাবেই যাত্রা শেষ হল! মাঝখানে একবার হেলপার ও কন্ডাকটরের সাথে কিছুক্ষণ তর্ক করলাম। আমার বক্তব্য ‘আপনাদের গাড়ির যে গ্রিলটি লাগিয়ে দিচ্ছেন এতে আপনারা যাত্রীর তুলনায় মূলতঃ নিজেদেরই সেভ করার চেষ্টা করছেন! ‘
রাত ১২.৩০ এর দিকে আমরা আম্বরখানায় নামলাম! আগেই সিন্ধান্ত হয়েছিল আমরা আরাফাত ভাইয়ের বোনের বাসায় থাকব! তাঁর দুলাভাই (পলাশ) এসে আমাদের নিয়ে গেলেন! আমরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম!
মজার ব্যাপার আমরা যখন সিলেটের কাছাকাছি তখন জোবায়ের সুমন ফোন করে জানতে পারে আমরা সিলেট যাচ্ছি! রাত তখন পোনে ১২ টা বাজে! সাথে সাথে সিন্ধান্ত নিলো সেও আসবে! রাত ১টার গাড়ি ধরে সুমনও রওনা দিল! সকালে এসে পৌছল!
সকাল বেলা আমরা আলাপ করছি কোন দিকে যাব! সিন্ধান্ত হল আমরা জাফলং যাব আগে! পলাশ ভাই বললেন দেখি গাড়ি ব্যবস্থা করা যায় না! উনি ফোন করে গাড়ি’র ব্যবস্থা করলেন! রওনা দিলাম আরও দুজন অতিথি সহ! দুর থেকে পলাম ভাই কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করছিলেন! আমি ভাবলাম স্পষ্ট যে পাহাড়টা তিনি সেটি দেখাচ্ছেন! কিন্তু কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম না!!!!!!!!!!!! তার চেয়েও অনেক উঁচু পাহাড়! কিছুটা অস্পষ্ট! অন্যরকম অনুভূতি পেলাম এত উচুঁ পাহাড় দেখে! কাছ দিয়ে যখন গেলাম তখন কার অনুভূতিতো অন্যরকম! কিন্তু দুঃখ! সবই ভারতের দখলে!
আমরা ঘন্টাদুয়েক জাফলং কাটালাম! নৌকায় করে ওপারে গেলাম! চা বাগান, পানের বরজ, রাজার বাড়ি ইত্যাদি দেখে ফিরে এলাম! দুঃখ রয়ে গেল, লুঙ্গি বাসায় ফেলে গেছিলাম! তাই গোসল করা হল না!
ফিরে এসে হালকা একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যার আগে বের হলাম! কিছু জায়গা ঘুরে গেলাম বন্দর সেতুর উপরে! সেখানে অনেকক্ষণ বসে আড্ডা মারলাম! এরপর ভাবলাম নৌকায় করে ঘুরি! রাতের বেলায় নদীর দুধারে আলো, নৌকা করে ঘুরতে অসাধারণ লাগবে! কিন্তু মাঝিকে জিজ্ঞেস করা মাত্র বলল ঘন্টা ২৫০ টাকা! মেজাজটাই একেবারে খারাপ হয়ে গেল! কি আর করা! ৩ দ্বিগুনে ৬ টাকা দিয়ে আমরা এপারে আসলাম! তারপর গেলাম দরগা পাড়ার দিকে! সেখানে গিয়ে দেখি আমার ক্লাস মেট ইমন যে সম্প্রতি আইডিএলসি’তে জয়েন করেছিল! আমি জানতাম না যে সে সিলেটে পোস্টিং পেয়েছে! ওর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে পরের দিন ৬টা’য় গ্রিনলাইনের টিকিট করে রাত ১১ টার দিকে বাসায় ফিরে এলাম! এর মধ্যে কাগজের মন্ড দিয়ে তৈরি একটা শো-পিচের দোকানে কাটালাম অনেক খানি সময়!
সকালে উঠে আমরা গেলাম এয়ারপোর্টের দিকে! সেখান থেকে পর্যটনের ইকো পার্কে কিছুক্ষণ ঘুরলাম (লাইক্যাতুরা’র পাশে) ! সংযুক্ত রেস্টুরেন্টে খেয়ে মেজাজ খারাপ হল! অন্য খাবারের দাম যাই নেক ফিক্সড প্রাইস ২২ টাকা বোতলের পানির দাম যখন ৩৫টাকা নিল তখনই মেজাটা বিগড়ে গেল! তারা ভ্যালু এড করেনি এমন জিনিসের দাম কিভাবে তারা বেশি নয়! মগের মুল্লুক আরকি!
তবে ইকোপার্কটিতে ঘুরে কিছুটা মজা লাগল! এরপর রওনা দিলাম শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে! দুটো রিকসা ভাড়া নিয়ে ভিতর থেকে ঘুরে এলাম! সেখানে কাটালাম ঘন্টা খানেক! সাজানো গোছানো ছোট্ট ক্যাম্পাস খানি ভালই লাগল! পিচ্ছি রিকসা চালক আমাকে বলেছিল আমি নাকি রিকসা চালাতে পারব না! তার চ্যালেঞ্জটি নিয়ে তাকে অবাক করে দিলাম ;)! তাকে বুঝলাম রিকসা চালনায় আমি নতুন নই!
এরপর আরাফাত ভাই সোজা বাসায়! তবে তার আগে আমার কিছু কেনা কাটা করা দরকার! পরের দিন অফিসে জয়েন করার কথা! তাই আমি আর সুমন গেলাম মার্কেটে! বাটা থেকে এক জোড়া স্যান্ডেল কিনলাম! এরপর জিন্দাবাজার গেলাম একটি গেঞ্জি কিনব বলে! ৬০০ টাকা গিয়ে একটা টি-শার্ট কিনলাম (কলার ওয়ালা!)! বাসায় ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করতেই গ্রিন লাইন থেকে ফোন! গাড়ি ৩০মিনিট দেরি হবে! তাই হালকা একটা ঘুম দিলাম! এরপর যথা সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে গেলাম স্ট্যান্ডে!
গ্রিন লাইন পরিবহনের অভূতপূর্ব(!) সেবা
ঘন্টাখানিক বসে থাকার পর যখন বড় ব্যাগগুলো বক্সে দেব তখন গ্রিন লাইনের গাইডের কথা শুনে মেজাজই খারাপ হয়ে গেল! তার কথা এত রাতে যাত্রাবাড়ি থামা (আরাফাত ভাই ও তাঁর বোন নামবেন সেখানে) ঝুকিপূর্ণ! অদ্ভূত কথা! ঢাকার বাহিরে রাতের বেলা এরকম কথা বলা হয়! যাত্রাবাড়িতে নামা যাবে না; নামতে হবে ফকিরাপুল! এটা শোনার পর মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেল! এরপর গাড়িতেও তার সাথে এটা নিয়ে কিছুক্ষণ কেচাল করলাম! কিন্তু গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলাম আমাদেরকে স্ক্যানিয়া বাস বলা হলেও আসলে স্ক্যানিয়া’র সিট না দিয়ে দেয়া হয়েছে ম্যান (MAN) গাড়ির সিট! এর ভিতরের পরিবেশ এতই বাজে যে অনেকেরই মাথা ব্যাথা শুরু হল! সিটের উপরে এসি হোলটা বন্ধ করলেও লাভ নেই কারণ তার পাশেই একটা ফাটা আছে যেটা দিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস আসছিল যে শেষ পর্যন্ত আমাকে ব্ল্যাঙ্কেট নিতে হয়েছিল! রেস্টুরেন্টে নামার পরে বুঝলাম অনেকেরই সমস্যা হচ্ছিল! সবাই একই কথা বলছিল! সিটগুলো বাজে! কোমর ও মেরুদন্ডের আয়ু কমে গেছে বহুদিন! যাহোক, শেষ পর্যন্ত ঐ শুয়রের বাচ্চাটা রাজি হল যাত্রাবাড়ি থামাতে! আরও কয়েকজনও রেগে গেল! তারা নামবে সায়েদাবাদ! তাদের নাকি ফকিরাপুল নেমে আবার উল্টা ফেরত আসতে হবে! রাত ১২টার পর যাত্রীদের কি রকম ঝুকি’র মধ্যেই না তারা ফেলছে! এটা শুনতে কার ভাল লাগে! আরাফাত ভাই ও তার বোন নেমে গেলেন! আমরা রয়ে গেলাম। আমরা কারওয়ান বাজার নামব বলেছিলাম! কিন্তু দেখলাম গাড়ি কাওরান বাজার থেকে অনেকটা সামনে চলে গেছে! তখন চিৎকার দিয়ে হেল্পারের দৃষ্টি আর্কষণ করে গাড়ি থামালাম! জানা গেল গাইড হেল্পার কে কিছু না বলেই ফকিরাপুল থেকে নেমে গেছে! একটা সিএনজি অটো নিয়ে বাসায় এসে আবিষ্কার করলাম দুপুরে শপিং করা টি-শার্ট, স্যান্ডেল, কিছু শো-পিচ ও একটা শর্ট প্যান্ট সমেত ব্যাগটি সিটের উপরে
র বক্সে রয়ে গেছে! সাথে সাথে কলাবাগান ও রাজারবাগে ফোন দিলাম (তখন রাত ১টা)! কিন্তু কেউ ফোন ধরল না! আরাফাত ভাইকে জানালাম ভোরে যেন তিনি কথা বলেন! তিনি সকালে ফোন দিলেন কলাবাগানে! সেখানে বলা হল রাজারবাগ ফোন করতে! রাজারবাগ থেকে ড্রাইভারের নম্বর দিয়ে বলল তার সাথে যোগাযোগ করতে! কিন্তু ড্রাইভারের ফোন বন্ধ! সেদিন সারাদিন ও পরের দিন বিকাল পর্যন্ত ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে না পেয়ে আমি কলাবাগান গেল! মনে হল ২৭ নম্বর গাড়ির কাউন্টারে গেছি! “আপনি রাজারবাগে কথা বলেন” বলেই খালাস! তাদের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে রাজারবাগে আবার কল করলাম! বলল তাদের কাছে কোন রিপোর্ট নেই এরকম! অদ্ভূত! ঐ মূহূর্তের আগ পর্যন্ত আমি ১০০% নিশ্চিত ছিলাম যেহেতু গ্রিন লাইন আমি ব্যাগটি ফেরত পাব! কিন্তু হায়! বাংলাদেশের সকল পরিবহনই যে প্রায় এক তা গুতা খেয়ে প্রমাণ পেলাম! কেউ দ্বায়িত্ব নিয়ে জিনিসটির সন্ধান করলো না দেখে গ্রিন লাইনের উপর বেশ হতাশ হলাম! আর কখনো এটাতে ভ্রমণের ইচ্ছা নেই!
Note: Bus no: 3913 (Coach No: 206), Journey Date: 23rd May, 2009, Time: 6.30pm.